ঘরের ছেলে সাক্কু কবে দলে ফিরছেন

- আপডেট সময় : ০৭:৩১:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লার স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রথম মেয়রও তিনি। ২০১২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফজল খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালেও তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০২২ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন। ওই নির্বাচনে তাকে কারচুপি করে হারানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে রয়েছেন আজীবন বিএনপির রাজনীতি করা সাক্কু। এখনো ভোটের রাজনীতিতে তার প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। অতীতের ভুল ক্ষমা করে বিএনপি কবে তাকে আপন করে নেবে, সেই জল্পনা চলছে স্থানীয় রাজনীতিতে।
মনিরুল হক সাক্কুর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে। দল তাকে পরিত্যাগ করলেও তিনি দল ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। ১৯৯৩ সালে সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি হন। ২০১০ পর্যন্ত সেই পদে বহাল ছিলেন। ২০২২ সালে বহিষ্কার হওয়ার আগে তিনি কুমিল্লা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পৌর চেয়ারম্যান হন। এরপর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে রূপান্তর হলে তিনি ২০১২ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র হন। ২০২২ সালের জুনের তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাকে ভোট গণনায় জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়। এক বছর পর আওয়ামী লীগের মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যু হলে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে নানা কারচুপি ও কেন্দ্র দখল করে বাহারকন্যা সূচনা বাহার মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সবশেষ সংসদ নির্বাচনে সাক্কুকে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি মনোনয়ন দিতে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। বাহারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য বলা হয়। প্রলোভন দেখানো হয় ভোটে জিতিয়ে আনার। কিন্তু সাক্কু তা প্রত্যাখ্যান করে আত্মগোপনে চলে যান।
সাক্কু কবে দলে ফিরতে পারবেন, এ নিয়ে কথা হয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার সঙ্গে। তিনিও কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। কালবেলাকে মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন সেই সময় থেকে বিএনপি বয়কট করে আসছিল। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল তাকে (সাক্কু) বহিষ্কার করে। এটি দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। দেশজুড়ে এমন অনেকেই আছেন। তাদের ব্যাপারে দল এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ কবে নাগাদ নিতে পারে—এমন আভাসও তার কাছে নেই বলে জানান মোস্তাক।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মো সেলিম ভূঁইয়া বলেন, যারা দলে ফিরে কাজ করার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এটা নির্ভর করছে অপরাধের ধরন ও কারণের ওপর। সাম্প্রতিক দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠিত দলীয় বর্ধিত সভায় দলে ঐক্য সুদৃঢ় করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা-৬ সদর আসন বিএনপি নেতা আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও মনিরুল হক সাক্কু ধারায় বিভক্ত। আমিন উর রশিদ ইয়াছিন এ আসনের দলীয় এমপি প্রার্থী হচ্ছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও মনিরুল হক সাক্কু সংসদ নির্বাচন করতে চান না। তিনি নিজেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিতে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। তাই দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও ভোটের রাজনীতিতে তার খুব একটা প্রভাব পড়বে না। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সংসদ নির্বাচন না করলেও সাক্কু একাই ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাকে সহসাই দলে ফিরিয়ে আনা উচিত। এতে দল সংগঠিত ও শক্তিশালী হবে। তারা আরও বলেছেন, এরই মধ্যে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনের চৈতী কালাম এবং কর্নেল আজিমের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে বড় জনসভা করেছেন। সেখানে এখন ঐক্যের সুবাতাস বইছে। সাক্কুকে দলে ফিরিয়ে এনে একই কৌশল নেওয়া যেতে পারে কুমিল্লা-৬ নির্বাচনী এলাকায়।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হক ভূঁইয়া স্বপন বলেছেন, সাক্কুর পক্ষ থেকে দলে ফেরার দুই দফা আবেদন করা হয়েছে অনেক আগেই। ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লা কালাকচুয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির রোডমার্চ চলাকালে সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দলীয় মহাসচিব বলেছিলেন, ‘ধৈর্য ধরো, অপেক্ষায় থাকো।’ সাক্কু মহাসচিবের আশ্বাসে অপেক্ষায় আছেন। আশা করছি, হাইকমান্ড ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘আমি ১৯৭৮ থেকে বিএনপির রাজনীতি করি। আমি মানুষের রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগের সময় ভয়ে কেউ নির্বাচন করতে চাইত না। আমি ভয়কে জয় করে বিজয়ী হয়েছি বারবার। মানুষ আমাকে চায়। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভুল করেছি, মানুষের স্বার্থে। পদ না থাকলেও আমি বিএনপি করি, অমৃত্যু করে যাব। আমার ভাই কর্নেল আকবর এ আসনের পাঁচবারের বিএনপির এমপি ছিলেন। কামাল ভাই পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন। দল আমাকে সুবিবেচনায় নেবে—এটা আমার বিশ্বাস।’