Bangladesh ০১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে হাটহাজারীতে উৎপাদন হওয়া কাঁকরোল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ এরশাদ আলী, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

হাটহাজারীতে কাঁকরোলের রং ও মান ভালো হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে এবার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে উপজেলার ফতেপুর জঙ্গল পশ্চিম পট্টিতে চাষ হওয়া আগাম জাতের কাঁকরোল, স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয়। বুধবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সমতল ভূমিতে প্রায় ১০০ কানি জমিতে কাঁকরোল চাষ হয় বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা । এখানে আদিকাল থেকে কৃষকরা বিভিন্ন কৃষি ফলন উৎপাদন করে আসছে এর ধারাবাহিকতায় এখনো চলমান রয়েছে। কৃষক মোতালেব, বকুল, হানিফ, হারুন সহ বেশ কয়েকজন জানান প্রতিদিন একেকজন কৃষক ৫০ থেকে ৭০ কেজি কাঁকরোল বিক্রি করে যার মূল্য ৬-৭ হাজার টাকা, এভাবে টানা তিন মাস পর্যন্ত ফসল বাজারে তুলতে পারলে লাখ টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।

কৃষক মোতালেব প্রতিদিন ১৫,০০০ টাকা বিক্রি করে ২ লাখের বেশি উপার্জন করেছেন সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। কৃষক মোহাম্মদ হানিফ, মোঃ কামাল সময়ের কাগজ কে বলেন একসময় আমরা অন্য চাষাবাদ করলেও মোনাফের পরামর্শে কাঁকরোল চাষে অনেকটা লাভবান হয়েছি। বর্তমান আমাদের ফসল বিদেশে নিয়ে যায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাটহাজারী ফতেপুরের অনেক কৃষক কাঁকরোল চাষ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। বর্তমানে কাঁকরোল চাষে ঝুঁকে পড়েছে ছোট বড় ১৫০ জনের বেশি কৃষক। কৃষি মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন বাংলা টিএসপি সার পাওয়া যাচ্ছে না, এটা ছাড়া ফসল ভালো হয়না, সাথে কীটনাশকের দাম কমিয়ে । বিভিন্ন পোকামাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের আরো ভুমিকা রাখা দরকার বলে জানাই তারা।
জোবরা-ফতেপুরের প্রায় শতাধিক কৃষক পরিবার নিয়ে সুখেই দিন অতিবাহিত করছেন। বছরে অধিকাংশ সময় কাঁকরোল বিক্রি করে তারা সংসার চালায়।
প্রতি মৌসুমেই এক কানি জমিতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পুঁজি কাটিয়ে কাঁকরোল চাষ করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কাঁকরোল বিক্রি করতে পারেন বলে জানান। তারা আরো বলেন, ‘কাঁকরোল ক্ষেত কৃষককে মারে না, ক্ষেতে কাঁকরোল ধরে কৃষক লাভবান হয়। অন্যান্য সবজি ফসল যেমন শসা, ঝিঙ্গা, বরবটি, শিম চাষ করলে সবজিতে পঁচন ধরে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে।

চৈত্র ও বৈশাখ মাসে উত্তোলন করা কাঁকরোলগুলো প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হলেও এখন দাম কমে হয়েছে ১০৫-১১০ টাকা।
জোবরা পশ্চিম পট্টি মৌজাটি কৃষকদের জন্য কাঁকরোল নির্ভর একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। চবি পাহাড়ের গা ঘেঁষে কাঁকরোল চাষে ভরপুর। এ গ্রামের কৃষক মোঃ মোনাফ ও কামাল জানান, এই এলাকাটি কৃষকদের জন্য খুব পরিচিত গ্রাম। পাহাড়ি ছড়ার পানিতে কৃষকরা প্রতিমাসেই সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। পাহাড়ি এলাকায় ও উঁচু জমিতে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কাঁকরোল চাষের জন্য কৃষকরা জমিতে মাটির বেড তৈরি করতে হয়। অন্যান্য সবজি ফসল একমাসেই তুলে নিতে হয়। কিন্তু কাঁকরোল চার মাসেই ফলন ধরে কৃষকদের লাভবান করে থাকে। প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে কৃষকরা হাটহাজারী, চৌধুরীহাট ও চবি চাকসু বাজারে কাঁকরোল বিক্রি করে থাকেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কাঁকরোল সংগ্রহ করে দূর-দূরান্তে নিয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁকরোল ১৪০’ টাকা দামে বিক্রয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ১০০ বা ১১০ টাকা দামে কেজি হিসেবে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে। দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ নেজাম, মোহাম্মদ সজিব ২০ কেজি কাঁকরোল অর্ডার করে নিয়ে যায়। এভাবে বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাচ্ছে এই সবজি।
হাটহাজারী কৃষি উপসহকারী মনিশ সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন চবি এলাকায় সবজি চাষ হয়। কাঁকরোল চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের গ্রামের কাঁকরোলের রং খুবই সুন্দর ও মান ভালো হওয়াতে চাহিদাও প্রচুর। তিনি আরো জানান, কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী প্রকাশ বেশি। হাটবাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ALAMGIR HOSSAIN

মুরাদনগর উপজেলা, কুমিল্লা। সম্পাদক, দেশ আমার ২৪ যোগাযোগ: +880 1747 808 428
ট্যাগস :

দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে হাটহাজারীতে উৎপাদন হওয়া কাঁকরোল

আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

মোঃ এরশাদ আলী, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

হাটহাজারীতে কাঁকরোলের রং ও মান ভালো হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে এবার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে উপজেলার ফতেপুর জঙ্গল পশ্চিম পট্টিতে চাষ হওয়া আগাম জাতের কাঁকরোল, স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয়। বুধবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সমতল ভূমিতে প্রায় ১০০ কানি জমিতে কাঁকরোল চাষ হয় বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা । এখানে আদিকাল থেকে কৃষকরা বিভিন্ন কৃষি ফলন উৎপাদন করে আসছে এর ধারাবাহিকতায় এখনো চলমান রয়েছে। কৃষক মোতালেব, বকুল, হানিফ, হারুন সহ বেশ কয়েকজন জানান প্রতিদিন একেকজন কৃষক ৫০ থেকে ৭০ কেজি কাঁকরোল বিক্রি করে যার মূল্য ৬-৭ হাজার টাকা, এভাবে টানা তিন মাস পর্যন্ত ফসল বাজারে তুলতে পারলে লাখ টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।

কৃষক মোতালেব প্রতিদিন ১৫,০০০ টাকা বিক্রি করে ২ লাখের বেশি উপার্জন করেছেন সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। কৃষক মোহাম্মদ হানিফ, মোঃ কামাল সময়ের কাগজ কে বলেন একসময় আমরা অন্য চাষাবাদ করলেও মোনাফের পরামর্শে কাঁকরোল চাষে অনেকটা লাভবান হয়েছি। বর্তমান আমাদের ফসল বিদেশে নিয়ে যায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাটহাজারী ফতেপুরের অনেক কৃষক কাঁকরোল চাষ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। বর্তমানে কাঁকরোল চাষে ঝুঁকে পড়েছে ছোট বড় ১৫০ জনের বেশি কৃষক। কৃষি মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন বাংলা টিএসপি সার পাওয়া যাচ্ছে না, এটা ছাড়া ফসল ভালো হয়না, সাথে কীটনাশকের দাম কমিয়ে । বিভিন্ন পোকামাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের আরো ভুমিকা রাখা দরকার বলে জানাই তারা।
জোবরা-ফতেপুরের প্রায় শতাধিক কৃষক পরিবার নিয়ে সুখেই দিন অতিবাহিত করছেন। বছরে অধিকাংশ সময় কাঁকরোল বিক্রি করে তারা সংসার চালায়।
প্রতি মৌসুমেই এক কানি জমিতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পুঁজি কাটিয়ে কাঁকরোল চাষ করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কাঁকরোল বিক্রি করতে পারেন বলে জানান। তারা আরো বলেন, ‘কাঁকরোল ক্ষেত কৃষককে মারে না, ক্ষেতে কাঁকরোল ধরে কৃষক লাভবান হয়। অন্যান্য সবজি ফসল যেমন শসা, ঝিঙ্গা, বরবটি, শিম চাষ করলে সবজিতে পঁচন ধরে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে।

চৈত্র ও বৈশাখ মাসে উত্তোলন করা কাঁকরোলগুলো প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হলেও এখন দাম কমে হয়েছে ১০৫-১১০ টাকা।
জোবরা পশ্চিম পট্টি মৌজাটি কৃষকদের জন্য কাঁকরোল নির্ভর একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। চবি পাহাড়ের গা ঘেঁষে কাঁকরোল চাষে ভরপুর। এ গ্রামের কৃষক মোঃ মোনাফ ও কামাল জানান, এই এলাকাটি কৃষকদের জন্য খুব পরিচিত গ্রাম। পাহাড়ি ছড়ার পানিতে কৃষকরা প্রতিমাসেই সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। পাহাড়ি এলাকায় ও উঁচু জমিতে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কাঁকরোল চাষের জন্য কৃষকরা জমিতে মাটির বেড তৈরি করতে হয়। অন্যান্য সবজি ফসল একমাসেই তুলে নিতে হয়। কিন্তু কাঁকরোল চার মাসেই ফলন ধরে কৃষকদের লাভবান করে থাকে। প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে কৃষকরা হাটহাজারী, চৌধুরীহাট ও চবি চাকসু বাজারে কাঁকরোল বিক্রি করে থাকেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কাঁকরোল সংগ্রহ করে দূর-দূরান্তে নিয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁকরোল ১৪০’ টাকা দামে বিক্রয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ১০০ বা ১১০ টাকা দামে কেজি হিসেবে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে। দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ নেজাম, মোহাম্মদ সজিব ২০ কেজি কাঁকরোল অর্ডার করে নিয়ে যায়। এভাবে বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাচ্ছে এই সবজি।
হাটহাজারী কৃষি উপসহকারী মনিশ সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন চবি এলাকায় সবজি চাষ হয়। কাঁকরোল চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের গ্রামের কাঁকরোলের রং খুবই সুন্দর ও মান ভালো হওয়াতে চাহিদাও প্রচুর। তিনি আরো জানান, কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী প্রকাশ বেশি। হাটবাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি পাওয়া যাচ্ছে।