Bangladesh ১০:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মুরাদনগরে গণপিটুনিতে চোরের মৃত্যু কুমিল্লার সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের এপিএস আব্দুল কাদের ঢাকায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এবার ভারতের ১৫ শহরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দশ টাকায় আহার পেলেন সাড়ে ৪শত মানুষ মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মুরাদনগরে পরীক্ষায় নকল সরবরাহে দুই যুবকের কারাদণ্ড সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: বিএনপি নেতা কায়কোবাদ মুরাদনগরে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরির দায়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু

৬ বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতন, গ্রাম্য সালিশে রফাদফা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:০১:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে

Oplus_0

  • সালিশে অভিযুক্তর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয় ভুক্তভোগীর পরিবারকে। বাকি ৫ হাজার টাকা বন্টন করে নেন ইউপি সদস্য সহ ৬ জন মাতব্বর।

 

  • নির্যাতনের ঘটনায় থানা পুলিশ করলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি ভুক্তভোগীর পরিবারকে।

 

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

ছয় বছরের এক কন্যা শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ৪৭ বছর বয়সি বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য মাতব্বররা ভুক্তভোগীর বাড়িতেই বসায় সালিশি বৈঠক। সালিশে ওই অভিযুক্তকে করা হয় জুতাপেটা এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা। জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক হাতে ধরিয়ে দেন মাতব্বররা। সালিশে আরও জানানো হয় মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত না মেনে থানা পুলিশ করলে শিশুটির পরিবারকে ছাড়তে হবে নিজ বসতভিটা।

ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের।

আরো জানা যায় সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তর কাছ থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা ছয় জন মাতব্বরদের মধ্যে বন্টনে ঘটে আপত্তি। চারজন মাতব্বর নেন ১ হাজার টাকা করে এবং দুইজনকে দেয়া হয় ৫’শ টাকা করে। টাকার সঠিক বন্টন না পেয়ে মাতব্বররা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছেন অভিযোগ।

অভিযুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে।

 

ভুক্তভোগী শিশুটির নানী জানান, আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমার মেয়ে তার স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করে। সেই সুবাদে তার ৬ বছরের কন্যা শিশুটি আমার কাছেই থাকে। গত জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ রোজ রবিবার আবদুল বারেকের ছেলে বাবুল মিয়া আমার নাতনির হাতে ১০ টাকা দিয়ে বলে চলো তোমাকে মজা কিনে দিবো। সে সরল বিশ্বাসে বাবুলের সাথে যায়। বাবুল একপর্যায়ে তাকে একটি ঘরের চিপায় নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তাৎক্ষণিক আমার নাতনি বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে ঘটনাটি জানায়। এই ঘটনার পর চার দিন খুব অসুস্থ ছিল সে। বিষয়টি গ্রামের মাতবরদের কাছে জানালে তারা আমাকে পরামর্শ দেয় গ্রাম্য সালিশ ডাকার জন্য। আর যদি মাতব্বরদের কথা অমান্য করে থানা পুলিশ করি তাহলে আমার খুব ক্ষতি হতে পারে। এই ভয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর আমি গ্রাম্য সালিশ ডাকি। সালিশে মাতব্বররা অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কোন সাক্ষী প্রমাণ হাজির হতে দেয়নি। বিচারের রায় দেয়া হয় অভিযুক্ত বাবুলকে ৬ টি জুতার বাড়ি এবং ৫ হাজার টাকা জরিমান। বর্তমানে আমি শিশু সন্তানটি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। প্রতিনিয়ত বাবুলের পরিবার থেকে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে যদি মুখ খুলি তাহলে আমাকে গ্রাম ছাড়া করবে।

 

ওই সালিশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাতব্বর বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে কাজ করেছে অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার পরিবার। সেই সুবাদে তাকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম্য সালিশ ডেকে নামমাত্র জরিমানা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়। সালিশের পরে আবার অভিযুক্তর কাছ থেকে ইউপি সদস্য শাহীন সহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা থেকে ইউপি সদস্য শাহিন, জাফর আলীর ছেলে বাবুল, সৈয়দ আলীর ছেলে বাবুল, শাহজালাল নেন ১ হাজার টাকা করে ৪ হাজার টাকা। আর বাকি ১ হাজার টাকা দেয়া হয় কবির ও সাগর কে। যতদূর শুনেছি ওই মহিলাকে সালিশের পরে বলা হয়েছে যদি থানা পুলিশ করে তাহলে গ্রাম থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। এই ঘটনাটির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।

 

ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম আর বিচারের জুড়ি বোর্ডের রায়ে সম্মতি প্রদান করেছি মাত্র। বিচার পরিচালনা করেছে গ্রামের মুরুব্বীরা আর সালিশি জুরি বোর্ড পরিচালনা করেছেন ছন্দু মিয়া, রেনু মিয়া, সাগর, রাজু ও কবির। পরে বিচারের রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে তার বড় ভাই তাহের মিয়া জুতাপেটা করে এবং জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির নানীর হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ALAMGIR HOSSAIN

মুরাদনগর উপজেলা, কুমিল্লা। সম্পাদক, দেশ আমার ২৪ যোগাযোগ: +880 1747 808 428
ট্যাগস :

৬ বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতন, গ্রাম্য সালিশে রফাদফা

আপডেট সময় : ০৫:০১:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

  • সালিশে অভিযুক্তর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয় ভুক্তভোগীর পরিবারকে। বাকি ৫ হাজার টাকা বন্টন করে নেন ইউপি সদস্য সহ ৬ জন মাতব্বর।

 

  • নির্যাতনের ঘটনায় থানা পুলিশ করলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি ভুক্তভোগীর পরিবারকে।

 

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

ছয় বছরের এক কন্যা শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ৪৭ বছর বয়সি বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য মাতব্বররা ভুক্তভোগীর বাড়িতেই বসায় সালিশি বৈঠক। সালিশে ওই অভিযুক্তকে করা হয় জুতাপেটা এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা। জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক হাতে ধরিয়ে দেন মাতব্বররা। সালিশে আরও জানানো হয় মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত না মেনে থানা পুলিশ করলে শিশুটির পরিবারকে ছাড়তে হবে নিজ বসতভিটা।

ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের।

আরো জানা যায় সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তর কাছ থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা ছয় জন মাতব্বরদের মধ্যে বন্টনে ঘটে আপত্তি। চারজন মাতব্বর নেন ১ হাজার টাকা করে এবং দুইজনকে দেয়া হয় ৫’শ টাকা করে। টাকার সঠিক বন্টন না পেয়ে মাতব্বররা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছেন অভিযোগ।

অভিযুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে।

 

ভুক্তভোগী শিশুটির নানী জানান, আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমার মেয়ে তার স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করে। সেই সুবাদে তার ৬ বছরের কন্যা শিশুটি আমার কাছেই থাকে। গত জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ রোজ রবিবার আবদুল বারেকের ছেলে বাবুল মিয়া আমার নাতনির হাতে ১০ টাকা দিয়ে বলে চলো তোমাকে মজা কিনে দিবো। সে সরল বিশ্বাসে বাবুলের সাথে যায়। বাবুল একপর্যায়ে তাকে একটি ঘরের চিপায় নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তাৎক্ষণিক আমার নাতনি বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে ঘটনাটি জানায়। এই ঘটনার পর চার দিন খুব অসুস্থ ছিল সে। বিষয়টি গ্রামের মাতবরদের কাছে জানালে তারা আমাকে পরামর্শ দেয় গ্রাম্য সালিশ ডাকার জন্য। আর যদি মাতব্বরদের কথা অমান্য করে থানা পুলিশ করি তাহলে আমার খুব ক্ষতি হতে পারে। এই ভয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর আমি গ্রাম্য সালিশ ডাকি। সালিশে মাতব্বররা অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কোন সাক্ষী প্রমাণ হাজির হতে দেয়নি। বিচারের রায় দেয়া হয় অভিযুক্ত বাবুলকে ৬ টি জুতার বাড়ি এবং ৫ হাজার টাকা জরিমান। বর্তমানে আমি শিশু সন্তানটি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। প্রতিনিয়ত বাবুলের পরিবার থেকে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে যদি মুখ খুলি তাহলে আমাকে গ্রাম ছাড়া করবে।

 

ওই সালিশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাতব্বর বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে কাজ করেছে অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার পরিবার। সেই সুবাদে তাকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম্য সালিশ ডেকে নামমাত্র জরিমানা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়। সালিশের পরে আবার অভিযুক্তর কাছ থেকে ইউপি সদস্য শাহীন সহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা থেকে ইউপি সদস্য শাহিন, জাফর আলীর ছেলে বাবুল, সৈয়দ আলীর ছেলে বাবুল, শাহজালাল নেন ১ হাজার টাকা করে ৪ হাজার টাকা। আর বাকি ১ হাজার টাকা দেয়া হয় কবির ও সাগর কে। যতদূর শুনেছি ওই মহিলাকে সালিশের পরে বলা হয়েছে যদি থানা পুলিশ করে তাহলে গ্রাম থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। এই ঘটনাটির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।

 

ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম আর বিচারের জুড়ি বোর্ডের রায়ে সম্মতি প্রদান করেছি মাত্র। বিচার পরিচালনা করেছে গ্রামের মুরুব্বীরা আর সালিশি জুরি বোর্ড পরিচালনা করেছেন ছন্দু মিয়া, রেনু মিয়া, সাগর, রাজু ও কবির। পরে বিচারের রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে তার বড় ভাই তাহের মিয়া জুতাপেটা করে এবং জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির নানীর হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়।